রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:২৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
সবকিছুর আগে বাংলাদেশ – তারেক রহমান চাঁদপুরে অনিয়মের দায়ে ইউপি চেয়ারম্যানসহ মেম্বার বরখাস্ত রাজধানীর বংশালে ভাড়া বাসা থেকে স্কুলছাত্রের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ১২ নং ওয়ার্ডের সদস্য পদ নবায়ন সেচ্ছাসেবক দলের সদর থানার সম্মেলন জুলহাস কে জামায়াত নেতারা হামলা করে,আমি সিটি করপোরেশন থেকে দোকান ভাড়া নিয়েছি, আমার দোকান তারা ভাংচুর করে। বললেন মহানগর সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক সাখাওয়াত ইসলাম রানা। মডেল গ্রুপের ব্যবস্থাপক পরিচালক মাসুদুজ্জামান মাসুদ সহ বিএনপির তৃনমুল নেতাকর্মীরা বিস্তারিত ভিডিও তে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শন শেষে কথা বলছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আড়াইহাজার উপজেলার মাটি ও মানুষের নেতা নজরুল ইসলাম আজাদ ভাই। ডা. জুবাইদা রহমানের বক্তব্য | জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন বিজ্ঞান মেলা ২০২৫

ছাত্রী বিবাহিত হলে সমস্যা কোথায়-শান্তা মা‌রিয়া

শান্তা মা‌রিয়া---
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ৩৭০ বার পঠিত

অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বুধবারই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির বৈঠকে সুপারিশ করা হচ্ছে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের থাকতে না দেয়ার নিয়ম বাতিল হচ্ছে। নিঃসন্দেহে এটা একটা সময়োচিত পদক্ষেপ। কিন্তু ভাবতে অবাক লাগে এতদিন এমন একটা আজব নিয়ম চালু ছিল এবং কেউ তা দেখেনি এটা কিভাবে সম্ভব।

নিয়মটি সত্যিই ছিল আজব। নিয়মটি শুনলেই তো মনে প্রশ্নে জাগে ছাত্রী বিবাহিত হলে সমস্যাটা কোথায়? আজব এই নিয়মে বলা হয়েছিল যে কোন ছাত্রী যদি বিবাহিত হয় তাহলে সে নাকি ঢাবির ছাত্রীহলে থাকতে পারবে না। আর বিবাহিত ছাত্রী যদি অন্তঃসত্ত্বা হয় তাহলে নাকি আরও বড় বিপদ। তাকে আর কোনমতেই আবাসিক হলে ঠাঁই দেয়া যাবে না। এমন একটি ভুতুড়ে আইন যে এতদিন বহাল ছিল সেটাই তো কোনদিন জানতে পারিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী হওয়া সত্ত্বেও।

আমার মনে আছে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কথা। অনার্সে পড়ছি তখন। দ্বিতীয় বা তৃতীয় বর্ষে কয়েকজন সহপাঠিনীর বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পরও তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেই থাকতো। হলে থেকেই তারা মাস্টার্স পর্যন্ত পাস করেন। অনেকে ভালো চাকরিও করছেন এখন।

আমার এক পরিচিত বন্ধু। বিয়ে হয়ে যায় তার অনার্স প্রথম বর্ষে। শ্বশুরবাড়ি ছিল চট্টগ্রামে। স্বামীও সেখানেই ছিল। মেয়েটি বিশ্ববিদ্যালয় ছুটির সময় শ্বশুরবাড়িতে যেত। অনার্স পরীক্ষার তিনদিন আগে মেয়েটির সন্তান হয়। তারপরও সে পরীক্ষা দিয়ে পাস করে। বর্তমানে সে একটি কলেজের শিক্ষক।

কল্পনা করুন তো একবার, যদি এই মেয়েগুলো বিয়ের পর হলে থেকে শিক্ষাজীবন চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ না পেত তাহলে কি হতো? বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে নিরাপদে ছিল বলে তাদের পরিবার থেকে শিক্ষা জীবন চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছিল। নিশ্চয়ই ঢাকায় আলাদা বাড়ি ভাড়া করে অথবা বেসরকারি কোন ছাত্রী হোস্টেলে থাকতে হলে তাদের লেখাপড়াটাই বন্ধ হয়ে যেত।

উচ্চশিক্ষা গ্রহণের মাঝখানে নারীর বিয়ে হয়ে যাবে এটা কারও কাম্য নয়। এটাকে সমর্থনও করছি না। কিন্তু সামাজিক বাস্তবতা হলো, অনার্স বা মাস্টার্স পড়ার সময় অনেক মেয়েরই বিয়ের আয়োজন করা হয় পারিবারিকভাবে। তখন মেয়ের পক্ষ থেকে পাত্রপক্ষকে অনুরোধ করা হয় তারা যেন বিয়ের পরও মেয়েটিকে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করে। অনেক পাত্রপক্ষ সেটি করেও থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকলে মেয়েটি নিরাপদে আছে বলে মনে করা হয় এবং তখন হয়তো পাত্রপক্ষ তেমন বাধা সৃষ্টি করে না।

কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাধা না দিলেও বিঘ্ন সৃষ্টি করছিল স্বয়ং ভাসুর মানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এমন অমানবিক আইন কিভাবে থাকে সেটাই প্রশ্ন। একটা জিনিস বুঝতে পারছি না একটি মেয়ে বিবাহিত হলে সমস্যাটা কোথায় ছিল? মেয়েটির কি তখন বাড়তি হাত পা গজায়? তার কি এমন পরিবর্তন হয় যে সে হলে থাকার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে?

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মানেই তো তার বয়স অন্তত ১৮ বছর। ১৮ বছরের উপরেই যদি হয় তাহলে তো তার বিয়ে করাটা আইনগতভাবে কোন অপরাধ নয়। বিয়ে কি অবৈধ না অপরাধ? আর বিবাহিত নারীর সন্তান ধারণও কি অপরাধ?

পিএইচডি করছে যে গবেষক তিনিও তো হলেই থাকবেন। নইলে থাকবেন আর কোথায়। বিশেষ করে তার যদি ঢাকায় পরিবার না থাকে। আর অনেক পিএইচডি গবেষক নারীরই তো বিয়ে হয়ে যায় মাস্টর্সের পরপরই। তাহলে তিনি কি হলে থাকতে পারবেন না? তবে সব ভালো তার শেষ ভালো যার। দেরিতে হলেও এবং জল অনেক ঘোলা করে এমনকি লিগ্যাল নোটিশ ইস্যু হওয়র পর টনক নড়েছে। ঢাবির প্রভোস্ট কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের হলে বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বাদের থাকার ক্ষেত্রে যে বিধি নিষেধ ছিল তা বাতিল করা হয়েছে। এখন থেকে বিবাহিত ছাত্রীদের হলে থাকতে আর বাধা নেই।

আরও জানিয়েছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় মনে করে মা ও সন্তানের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের পরিবারের কাছে থাকা ভালো। সেটা তো সকলেই মনে করে। কিন্তু যাদের সে উপায় নেই। যারা বাধ্য হয়ে থাকছেন তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য হলগুলোতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা রাখা কি একান্তই অসম্ভব?

শান্তা মা‌রিয়া
লেখক : কবি, সাংবাদিক, কলামিস্ট।
সুত্র:জা‌নি

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 nagorikkhobor.Com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com